শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন

না যায় বলা, না যায় ভোলা!

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক, একুশের কন্ঠ : হাসিমুখ, স্বাভাবিক আচরণ ভেতরের সব খবর নাও দিতে পারে। অন্তরে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও বাহিরে শান্ত নদী বহমান দেখাতে পারে। মানুষ আসলে তার সব কথা বলতে পারে না। কত দুঃখ, কত বেদনা নিজেকেই বয়ে বেড়াতে হয় তা সংখ্যায় অগুনিত। কাছের মানুষ হোক, প্রিয় স্বজন হোক-সব ব্যথা মন খুলে বলা যায় না। পৃথিবীর কেউ সেই কিছু ক্ষতের খবর জানে না।

আমাদের দুঃখ আছে। একেবারে ছাইচাপা দুঃখ। অন্তর পুড়িয়ে যায় কিন্তু বাহিরে তাপের ছাপ ফেলে না। দৌড়ঝাঁপ, হাসির খোরাকেও তখন মনের আকাশের মেঘলাভাব কাটাতে পারে না। এমন এমন মানুষ দুঃখ দেয় যা না যায় বলা, না যায় ভোলা। অথচ তারা দুঃখ না দিয়েও পারতো। খারাপ সময়ের খোঁজ খবরের পাতায় ছাপে না বটে তবে মনের পাতায় দাগ রেখে যায়। কিছু বলতে পারলে ভার কমতো, কিন্তু সব কথা সবাইকে কিংবা কাউকেই যে যায় না বলা। জিহ্বা দিয়ে ডেকেও মনের পায় না সাড়া।

কারো দুঃখের ইতিহাস, কষ্টের পাহাড় আরেকজনের কাছে দুটো লাইন, একফোঁটা ঠোঁট বাঁকানো হাসির রেখা হওয়ায় সব দুঃখ সবার কাছে বলা যায় না। কিছু দুঃখ কারো সাথেই কওয়া হয় না। মাঝে মাঝে ভীষণ মন খারাপের কালে খোদা নতুন করে বেদনার গল্প শোনেন বটে তবে তিনি আগে থেকেই সব জানেন! যে দুঃখ একার সে ব্যথার ভার অন্য কারো হৃদয়ে না দেখার শোক চিরন্তন হোক। কিছু কিছু ক্ষত মোছে না বরং রুটিন করে দগদগে হয়! স্মৃতির কলঙ্কিত অংশকে মাঝে মাঝে রগরগে করে!

সব কুয়াশা, সব হতাশা, সকল ব্যথা ও গ্লানি আলোর রেখায় একদিন কেটে যাবে। থেকে যাবে স্মৃতিতে দাগ, বলিরেখা! ব্যথার স্মৃতি চিরকাল সতেজ থাকে। নতুন ব্যথা পুরোনোকে ডেকে তোলে। দুঃখ-কষ্ট, রাগ-ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয়। অতঃপর মহাকালের যাত্রায় পথের সাথে মিশে যায় মানুষ। সবকিছু মরে যায়, সব কিছু ক্ষয়ে যায় তবুও ব্যথার বৃক্ষ শাখা-প্রশাখায় বাড়ে। কাউকে শোনানো হয়নি বলে সে তরুর নাম মরুরবুকের কেউ জানে না। তবুও রোজ রোজ বৃদ্ধি দেখতে আসে। ফিরে যায়, একটু একটু হাসে। মানুষ যে মানুষকে অখুশি দেখতে বড্ড ভালোবাসে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com